বিশ্বের ১৬০টি দেশের ১৮ লাখের বেশি ধর্মপ্রাণ মুসলমান এবার হজ পালন করেছেন।

 

পাপমুক্তি ও আত্মশুদ্ধির আকুল বাসনা নিয়ে পবিত্র হজ পালন করেছেন লাখো মুসলমান। হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা হিসেবে গতকাল মঙ্গলবার সূর্যোদয়ের পরপরই লাখো হাজি মিনা থেকে রওনা হন আরাফাতের ময়দানের দিকে। ট্রেন, বাসে বা হেঁটে তাঁরা জড়ো হন সেখানে। লাখো কণ্ঠে ধ্বনিত হয় ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হাম্‌দা ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুল্‌ক, লা শারিকা লাক।’ অর্থাৎ আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই, সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই, সব সাম্রাজ্যও তোমার।

প্রচণ্ড গরম উপেক্ষা করে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত লাখো হাজি আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করে মহান আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে আল্লাহর প্রতি আত্মসমপর্ণের পবিত্র বাণী উচ্চারণ করেন।

তিন দিকে পাহাড়বেষ্টিত বিরাট সমতল ময়দানের নাম আরাফাত বা আরাফাহ। এই ময়দান দৈর্ঘ্যে দুই মাইল, প্রস্থেও দুই মাইল। আরাফাতে রয়েছে জাবালে রহমত বা রহমতের পাহাড়। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) জাবালে রহমতের কাছে দাঁড়িয়ে বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন।

 

* বাংলাদেশ থেকে এবার হজ করতে গেছেন ১ লাখ ২২ হাজার ৮৮৪ জন। * হাজিরা আজ বুধবার মিনায় ফিরে যাবেন এবং পশু কোরবানি দেবেন।

 

আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হওয়া হজের অন্যতম ফরজ। ফলে যাঁরা সৌদি আরবে হজ পালনের উদ্দেশ্যে গিয়ে অসুস্থতার কারণে সেখানকার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, তাঁদেরও অ্যাম্বুলেন্সে করে গতকাল আরাফাতের ময়দানে স্বল্প সময়ের জন্য আনা হয়।

সূর্যাস্তের পর আরাফাতের ময়দান থেকে আট কিলোমিটার দূরে মুজদালিফার উদ্দেশে রওনা দেন হাজিরা। অনেকে হেঁটে সেখানে যান। এজদালিফা শব্দ থেকে মুজদালিফা শব্দের উৎপত্তি। এজদালিফা মানে হলো নিকটবর্তী হওয়া বা মিলিত হওয়া। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হাজিরা একে অপরের কাছাকাছি হন। তাই এমন নামকরণ বলে অনেকে মনে করেন। নামকরণের আরেকটি ঘটনার কথা শোনা যায়, সেটি হলো হজরত আদম (আ.) ও হজরত হাওয়া (আ.) পৃথিবীতে আসার বহু বছর পর আরাফাতে মিলিত হন। সেখান থেকে এসে মুজদালিফায় একত্রে রাত যাপন করেন। সে কারণে মুজদালিফার আরেক অর্থ নৈকট্য লাভ করা।

সূর্যাস্তের আগে যাতে কেউ ভুল করে আরাফাতের ময়দান ত্যাগ করতে না পারেন, সে জন্য ময়দানের ফটক বন্ধ করা থাকে। সূর্যাস্তের পর যখন এই ফটক খুলে দেওয়া হয়, তখন রাস্তায় লাখো হাজির ঢল নামে। সূর্যাস্তের কিছু সময় পর হাজিদের একটি দলের সঙ্গে আরাফাতের ময়দান থেকে আমরা বাসে করে রওনা দিলাম। ঘণ্টা দুয়েক পর আমরা পৌঁছালাম মুজদালিফায়। পুরো পথের দুই পাশে এবং পাহাড়ে তখন লাখো হাজি মুজদালিফায় যাওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন। তাঁদের অনেকেই রাস্তায় শুয়ে ছিলেন। মূল সড়ক থেকে কিছুটা নিচে পিচঢালা সড়কের ওপর কাছাকাছি বিশ্রামাগার দেখে মক্কা থেকে কেনা প্লাস্টিকের পাটি বিছালাম। পাটির ওপর চাদর বিছিয়ে, পাটির সঙ্গে থাকা বালিশ ফুঁ দিয়ে ফোলালাম। তখন রাত প্রায় নয়টা। আবার অজু করে মাগরিব ও এশার নামাজ আমরা একসঙ্গে আদায় করলাম। এখানে একটা কথা বলা প্রয়োজন। আরাফাতের ময়দানে অথবা আরাফাত থেকে মুজদালিফা যাওয়ার পথে মাগরিবের নামাজের সময় হলেও নামাজ পড়া নিষেধ। মুজদালিফায় পৌঁছার পর মাগরিব ও এশার নামাজ একসঙ্গে পড়তে হয়। এরপর মুজদালিফার খোলা প্রান্তরে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাতে হয়। এই মাঠেও কিছু দূর পরপর বিশ্রামাগার রয়েছে।

 

নামাজ শেষে আমরা আশপাশ থেকে ছোট ছোট ৭০টি পাথর সংগ্রহ করলাম। জামারায় শয়তানের উদ্দেশে পরপর তিন দিন ছোড়ার জন্য প্রয়োজনীয় পাথরের টুকরা এখান থেকেই সংগ্রহ করতে হয়। পাথর সংগ্রহ করার পর আমরা শুয়ে একটু বিশ্রাম নেওয়ার চেষ্টা করলাম। ইহরাম পরা অবস্থায় মুখ ও মাথা ঢাকা নিষেধ। আমাদের আশপাশে যাঁরা অবস্থান করছিলেন, তাঁরা কেউ বাংলায়, কেউ আরবিতে, কেউ ইংরেজিসহ নানা ভাষায় কথা বলছিলেন। সবাই খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছেন—কেউ শুয়ে কিছুটা বিশ্রাম নিচ্ছেন, কেউ নামাজ পড়ছেন। অচেনা অনেকে পাশাপাশি নামাজ আদায় করছেন। মুজদালিফায় সুবহে সাদিক থেকে সূর্যোদয়ের পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ক্ষণিকের জন্য হলেও অবস্থান করা ওয়াজিব।

 

হাজিরা আজ বুধবার মিনার তাঁবুতে ফিরে যাবেন, বড় শয়তানকে সাতটি পাথর মারবেন। এরপর কোরবানি শেষে হাজিরা মাথার চুল ছেঁটে স্বাভাবিক পোশাক পরে মক্কায় ফিরে কাবা শরিফ সাতবার তাওয়াফ (কাবা শরিফ সাত চক্কর দেওয়াকে তাওয়াফ বলে) করবেন। জমজমের পানি পান করবেন। সাফা-মারওয়া পাহাড় সাতবার প্রদক্ষিণ করে হজের অত্যাবশ্যকীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করবেন। এরপর তাঁরা আবার মিনায় ফিরে পরবর্তী দুই দিন সেখানে তিনটি শয়তানের উদ্দেশে পাথর ছুড়বেন। এভাবে হজের আনুষ্ঠানিকতা পুরোপুরি শেষ হবে।

মক্কায় বিদায়ী তাওয়াফ করার পর হাজিরা যাঁর যাঁর দেশে ফিরে যাবেন।

 

 

 উমরাহ পালনের সঠিক নিয়মাবলী জেনে নিন

 

হজের ইতিহাস, তাৎপর্য ও শিক্ষা

Hajj 2024 Pre Registration

Hajj 2025 Pre Registration

Hajj 2026 Pre Registration

Hajj 2027 Pre Registration

Hajj 2028 Pre Registration

Umrah 2025

Umrah 2026

Umrah 2027

Umrah 2028